শুধু সরকারি চাকরিজীবী নয়, সম্পদের হিসাব দিতে হবে পরিবারের সদস্যদেরও
- আপলোড সময় : ০৭-০৯-২০২৪ ০৮:২৪:৪৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৭-০৯-২০২৪ ০৮:২৪:৪৪ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর নয়, তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাবও জমা দিতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে চাকরিজীবী এবং তাদের পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়ে এবং মা-বাবার দেশে ও বিদেশে থাকা সম্পদের হিসাব নির্দিষ্ট ফরম অনুযায়ী দাখিল করতে হবে। ফরমে জমি, বাড়ি-গাড়ি, ফ্ল্যাট, অলংকার, শেয়ার, বীমাসহ বিভিন্ন স¤পদের তথ্য, স¤পদের অবস্থান, কেনা সম্পত্তির অর্থের উৎস দিতে বলা হবে। দুদক সচিবকে আহ্বায়ক করে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটি এ ধরনের তথ্য চাওয়ার জন্য অভিন্ন ফরম তৈরির কাজ শুরু করেছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
সম্পদের হিসাব জমা হওয়ার পর শিগগিরই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সম্পদের হিসাবের সঙ্গে বিগত বছরের টিআইএনের কপি সংযুক্ত করতে বলা হবে। বাবা-মার পাশাপাশি শ্বশুর-শাশুড়ির সম্পদের হিসাব চাওয়ারও সিদ্ধান্ত হতে পারে।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দিতে হয়। এরপর পাঁচ বছর অন্তর সম্পদ কমা বা বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার নিয়ম আছে। দুর্নীতি রোধ ও চাকরিজীবীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আচরণবিধিমালায় এমন নিয়ম থাকলেও এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরেই মানা হয় না। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও সরকারি চাকরিজীবীরা তাদের সম্পদের হিসাব দেননি। বিগত সরকারের সময় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের অঢেল সম্পদ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। ক্ষমতার পালাবদলের পরও প্রশাসন, পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মচারীদের দুর্নীতির খবর আসছে গণমাধ্যমে।
সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার দুর্নীতির অনুসন্ধানে নামে দুদক। এমন পরিস্থিতিতে বিগত সরকারের আমলে সম্পদের হিসাব যাতে দিতে না হয় সে বিষয়ে শীর্ষ কর্মকর্তারা চাপ দিয়ে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা সংশোধনের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে সরকারকে বাধ্য করেছিল। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১ সেপ্টেম্বর সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব চাওয়ায় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণবিধিমালা দ্রুত যুগোপযোগী করে নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। ২০১২ সালের শুদ্ধাচার কৌশলও সংশোধন করা হচ্ছে। এসব নীতিমালায় নিয়মিত সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিধান নিশ্চিত করা হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো ফরম্যাট বা অভিন্ন ফরমে সম্পদের তথ্য বা বিবরণী সরকারের কাছে দাখিল করবেন, তা ঠিক করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিবকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা শাখার অতিরিক্ত সচিবকে।
কমিটিতে রয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অর্থ বিভাগ এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের প্রতিনিধি। এই কমিটি অভিন্ন ফরম ও নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ফরম সব সরকারি চাকরিজীবীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এরপর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাইকে সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলা হবে। আর হিসাব জমা হওয়ার পর যাদের সম্পদ অস্বাভাবিক মনে হবে দুদক তাদের তলব করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। বছরে একবার এই বিবরণী জমা দিতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ জমা না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পদের হিসাব জমা না দিলে কী শাস্তি হবে তা ফরম দেওয়ার সময় বলে দেওয়া হবে। কারণ কেউ হিসাব না দিলে যদি কোনো শাস্তি না হয় তা হলে অন্যরা কেন জমা দেবে। তিনি বলেন, সবাইকে স¤পদের হিসাব দিতে হবে। জিরো সম্পদ থাকলেও হিসাব দিতে হবে। তিনি জানান, সম্পদের হিসাব বছরে একবার দিতে হবে। সেটা হয় ১ জানুয়ারি, না হয় ১ জুলাই, বিষয়টা পরে ঠিক করা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ